বাংলাদেশে মাত্র কিছুদিন আগে বাসে গণ ধর্ষণের পর এক তরুণীকে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে যাবার ঘটনা ঘটার পর রাজধানী ঢাকাসহ সবখানে রাস্তায় পথেঘাটে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর নারীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের নানা খবর পাওয়া যায়। ঢাকায় মেয়েরা যারা কাজ বা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে বের হন তারা নিজেদেরকে কতটা নিরাপদ মনে করেন?
পেশায় চিকিৎসক নার্গিস বেগমের চেম্বার ঢাকার আজিমপুরে। রোজ রাত নটার পর তাকে রিক্সা বা বাসে করে মোহাম্মদপুরে বাড়িতে ফিরতে হয়। তিনি বলছিলেন, প্রায় প্রতিরাতেই তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক ফার্মগেটের রাস্তায়, রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে, অল্প হাতে গোনা কয়েকজন নারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কাশফি তানজিমা। মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে উত্তরাগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
বলছিলেন রাতে কোথাও কোন কাজ থাকলে সঙ্গে মা, বাবা বা বন্ধুদের কেউ না কেউ থাকে।
“সবসময় ভয়ে থাকি বাসে পাশে সিটটায় কে এসে বসলো। দেখা যায় অন্য সিট খালি থাকলেও মেয়েদের পাশে এসে বসতে চায় লোকে। ভয় পাই এমন কোন মন্তব্যের, যা আমি শুনতে চাই না, আর সেই সাথে এমন কোন আচরণ, যা আপনি আন্দাজ করতে পারছেন।”
কাশফি তার ভয়ের কথা আর মুখ ফুটে বলেননি। তবে, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তার অভিভাবকেরা সন্ধ্যার পর তাকে অনেক অনুষ্ঠানে যেতে দেন না। ঢাকা শহরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ মার্কেট এবং গুলশানসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবী নারীরা বললেন, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
একশন এইড বাংলাদেশের এক সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ নারী রাস্তায় আর স্কুল কলেজের বাইরে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন। গত কয়েক বছরে দেশে পিছু নেয়া পুরুষের হাতে এমনকী খুন হয়েছেন স্কুল পড়ুয়া কয়েকজন মেয়ে। মাত্র গত মাসে পরিবহনে ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন একজন কর্মজীবী নারী।
কিন্তু এই নিরাপত্তাহীনতা কাটানো যাচ্ছে না কেন? নারী অধিকারকর্মী নীনা গোস্বামী বলছেন, রাস্তায় সেরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি।
“রাস্তায় যথেষ্ট আলো নেই, পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নেই। যথেষ্ট যানবাহন নেই। এগুলোই কারণ। এর সঙ্গে আছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি।”
মিজ গোস্বামী বলছেন, মেয়েদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের করণীয় আছে আরো অনেক কিছু। নিরাপত্তা নিয়ে শংকা আর উদ্বেগ না থাকলে নার্গিস বেগম বা কাশফির মত নারীরা ঢাকায় নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন, আর সমাজের নানা স্তরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে বহুগুণ।